গল্পের গাঁথুনি কিংবা অভিনয়ের মতো বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামালে সাইফাই অ্যাকশন সিনেমাখোররা দারুণ উপভোগ করবেন সিনেমাটি।
একটি নতুন সূচনার প্রত্যাশা
২০০৭
সাল থেকেই মূলত ট্রান্সফর্মারদের গল্পের শুরু। প্রথম সিনেমার পর থেকেই
ফ্র্যাঞ্চাইজিটির একটি ভক্তমহল গড়ে ওঠে। ভিনগ্রহবাসী অটোবট আর
ডিসেপটিকনদের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বেশ কয়েকবার
কাহিনিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তবে সিরিজে গল্পের ধারাবাহিকতা কখনও
রক্ষিত হয়নি।
সিরিজের তৃতীয় সিনেমায় অপটিমাস প্রাইম আর মেগাট্রনের লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটায় এবার ভক্তদের আশা ছিল নতুন কিছুর।
নতুন গল্প এসেছে বটে, আগমন ঘটেছে নতুন খলচরিত্রেরও। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায়নি গল্পের শক্ত কোনো ভিত্তি।
সিনেমায় একাধিক ক্ল্যাইম্যাক্স থাকার বিষয়টিও এক পর্যায়ে ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে।
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বর্তমান
গল্পের
শুরুটা প্রাগৈতিহাসিক সময়ে। অজ্ঞাত ভিনগ্রহবাসীদের আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে
পরিণত হওয়া ডাইনোসররা মানবসভ্যতার ইতিহাসের মোড়ই ঘুরিয়ে দেয়। এরপরের
দৃশ্যপট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস। যেখানে এক স্বাধীন উদ্ভাবক কেইড
ইয়োগার (মার্ক ওয়ালবার্গ) ভাগ্যচক্রে পেয়ে যান অপটিমাস প্রাইমকে। মানুষের
বন্ধু অটোবটরা মানুষেরই হামলার লক্ষ্যে পরিণত হওয়ায় যে আত্মগোপন করতে
বাধ্য হয়েছিল। অন্যদিকে এক কর্পোরেট উদ্ভাবক আবিষ্কার করে বসে কোন উপকরণ
দিয়ে তৈরি ট্রান্সফর্মাররা।
‘ট্রান্সফরমার্স: এইজ
অফ এক্সটিংশন’ সিনেমাটিতে যে পরিবর্তনটি চোখে পড়ার মতো, তা হলো একেবারে
নতুন কলা কুশলী। প্রথম তিনটি সিনেমায় প্রধান ‘স্যাম উইটউইকি’ চরিত্রে অভিনয়
করা শিয়া লাবেউফ ছিলেন না এই সিনেমায়। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন
মার্ক ওয়ালবার্গ।
অভিনয়ের দিক থেকে তেমন কিছু করার ছিল না ‘দ্য ফাইটার’-খ্যাত ওয়ালবার্গের।
তবে ব্যবসায়ী বিজ্ঞানী জশুয়া জয়েসের চরিত্রে স্ট্যানলি টুচ্চি সিরিয়াস এবং
কমিকের মিশেলে ভালো একটা পারফর্ম্যান্স উপহার দিতে পেরেছেন।
সিনেমার
এক পর্যায়ে এসে, মুখোমুখি দ্বন্দ্বটি কি অটোবটদের সঙ্গে মানুষের নাকি
মানুষের তৈরি ট্রান্সফর্মার প্রোটোটাইপদের- সেটা বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে।
কাহিনি বারবার নতুন দিকে মোড় নেওয়ায় ক্রমেই ঘোলাটে হয়ে ওঠে। এমনকি অপটিমাস
প্রাইমের চরিত্রটি নিয়েও সুবিচার করতে পারেননি নির্মাতারা। সবচেয়ে জনপ্রিয়
অটোবট বাম্বলবির উপস্থিতি সিনেমার দৈর্ঘ্যের তুলনায় নগন্যই বলা চলে।
খুঁটিনাটি
একটি
দিক দিয়েই সিনেমা চূড়ান্তভাবে সফল, সেটি সিনেমার স্পেশাল ইফেক্টস,
ভিএফএক্স আর ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে। এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার
হিসেবে এখানে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন অস্কারজয়ী পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ।
যারা হাল আমলের বিভিন্ন গাড়ির খোঁজখবর রাখেন, তাদের কাছে সিনেমাটি দারুণ
লাগবে। ল্যাম্বরগিনি এভেন্টেডর, বুগাত্তি ভেরন, শেভরলে করবেট স্টিংরে,
হামার এইচটু-- এদের মতো ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোকে দেখা গেছে সিনেমাটিতে।
সিনেমার কিছু অ্যাকশন দৃশ্যে দক্ষতার পরিচয় মিলেছে পরিচালক এবং স্টান্ট
কুশলীদের। বেইজিংয়ের মতো লোকেশনে কেইড এবং স্যাভয়ের ফাইটিং সিকোয়েন্স
দর্শকদের টান টান উত্তেজনার কিছু মুহূর্ত উপহার দেবে। অটোবটদের সঙ্গে
লেজেন্ডারি ডাইনোবট এবং প্রোটোটাইপদের অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলোও ছিল বেশ
চমৎকার।
সিনেমাকে প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য প্রয়োজন সংলাপের
উপযুক্ত প্রয়োগ। দুর্বল সংলাপ কখনও সিনেমাটিকে পুরোপুরি উপভোগ্য করে তুলতে
পারেনি। কিছু ক্ষেত্রে হাস্যরস সৃষ্টির চেষ্টা অপ্রয়োজনীয় ও বিরিক্তকর
মনে হয়েছে। সবমিলিয়ে পরিচালনার দিক থেকে ব্যর্থই বলতে হচ্ছে মাইকেল বেকে।
শেষকথা
এ নিয়ে চারটি সিনেমা হলো ট্রান্সফরমার্স সিরিজের। পাঁচ নম্বর সিনেমার
বিষয়েও আলোচনা শুরু করেছে প্যারামাউন্ট পিকচার্স, যেটি আসতে পারে ২০১৭
সালে। রটেন টমেটোস, মেটাক্রিটিকের মতো ক্রিটিক ওয়েবসাইট ‘ট্রান্সফর্মার্স:
দ্য এইজ অফ এক্সটিংকশন’কে সাধারণের নিচেই একটু নিচের কাতারেই ফেলে দিয়েছে।
সংশয় তৈরি হয়েছে পরবর্তী সিনেমার গল্পের যৌক্তিকতা নিয়েও।
তারপরও অপটিমাসের নেতৃত্বে মানব কল্যাণে অটোবটদের লড়াই অ্যাকশনপ্রেমী দর্শককে সবসময়ই বিনোদনের খোরাক জোগাবে।
0 comments:
Post a Comment