আমরা যারা ই-কমার্স সাইট খুলে একটা ব্র্যান্ড ক্রিয়েট করতে
চাই,প্রথমে পুঁজি খুব অল্প থাকে কিন্তু স্বপ্ন অনেক।প্রাথমিক অবস্থায়
প্রোডাক্ট যদি নিজের তৈরি নাহয় তাহলে আমরা যা করি প্রোডাক্ট সোর্স করে নিজে
ফেসবুক পেজ দিয়ে সেল করি,পাশাপাশি হয়ত সাইট থেকেও সেল করি,কিন্তু
মার্কেটিং বাজেট বেশী না থাকায় আমরা বড় ই-কমার্স গুলো যারা ভেন্ডর থেকে
প্রোডাক্ট নিয়ে সেল করে তাদের কাছে যাই,বি টু বি বিজনেস করার চেষ্টা করি।
ওরা আমাদের প্রোডাক্ট সেল করে ওদের কমিশন রেখে আমাদের টাকা দিয়ে দেয়,এভাবে
আমাদের ব্যবসা চলতে থাকে,লাভ ভালই হয় খারাপ না। এবার আসুন দেখি যারা আমরা
মার্চেন্ট হিসেবে যারা কাজ করি তাদের কি সমস্যা হয় এবং কি কি সতর্কতা
অবলম্বন করা দরকার।যেহেতু অনেকেই নিজের ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন তাই আমার
মনে হল আমার অভিজ্ঞতা গুলো শেয়ার করা দরকার।যারা অলরেডি মার্চেন্ট হিসেবে
কাজ করছেন তাদেরকেও অনুরোধ করব অভিজ্ঞতা শেয়ারের জন্য।
সমস্যা
-আপনি জানেন না কাদের সাথে ডিল করবেন, ধরুন গেলেন
একটা ই-কমার্স সাইটে,ওরা আপনাকে ইস্টোর নামক জিনিশের জন্য ভালো ভাবে
প্রেসার দিবে,এমন ভাবে দেখাবে যে এই জিনিশ না নিলে আপনার জীবন বৃথা, এটা না
নিতে পারলে আপনার সেল বাড়বে না। তাদের কথা বার্তা, অফারে আপনি অভিভূত।
কিন্তু ইস্টোরের মাসিক চার্জ আপনার সাধ্যের বাইরে। আপনি নিম রাজী হলে তারা
নানা রকম ডীস্কাউন্ট দিয়ে দিয়ে আপনাকে পাগল করে ফেলবে। এক সময় আপনি ভালো
একটা চার্জে ইস্টোর নিলেন,তারপর দেখা যাবে আপনার প্রমোশন যা করার তার কিছুই
হয়নি ।যেই লাউ সেই কদু। সেল তেমন একটা বাড়েনি।
-প্রোডাক্ট নিয়ে গেলেন, ওরা এমন ভাবে তাকাবে যে এই জিনিশ তো ফ্রি ই দিয়ে
দেয়,দাম এমন বলবে শুনে আপনার মনে হবে কি আধুনিক ই-কমার্স বিজনেস করতে
আসলাম,মাছ বাজারে গেলেও তো ভালো হত। তারপর তারা একটা দাম নির্ধারণ করে
দিবে, ধরুন আপনার প্রফিট হয়ত ১০-১৫% হবে,কিন্তু তারা কত তে সেল করবে তা
নিয়ে আপনি কিছু বলতে পারবেন না,সেটা ৫০% হোক আর ১০০% লাভে।
-প্রোডাক্ট দিয়ে আসলেন কিন্তু ওয়েবে আপলোড দেয়ার বেপারে তাদের কোন
চিন্তা নাই,৫-৭ দিন হয়ে গেল কিন্তু আপলোড দেয়নি, তাতে তাদের কিছু
হয়নি,কিন্তু আপনার ক্যাশ ফ্লো কমে গেল।যেমন গত রোজার ঈদে আমি একটা ই-কমার্স
কে তাদের চাপাচাপি তে কিছু ঘড়ি দিয়ে আসি, ঈদের বেশ আগে,ঈদ পার হয়ে গেলেও
ওই প্রোডাক্ট আপ হয় ঈদের ১৫ দিন পরে,সেল হতে আরও ১৫ দিন। তার মানে যেখানে
ঈদেই সব সেল হয়ে যেত সেখানে আমার টাকা পরে রইল প্রায় এক মাস।
-ভালোয় ভালোয় ডিল শেষ হয়ে গেল,কয়টা সেল হল সেই খবর তো দূরে থাক কতটা রইল
তাও ঠিক মত হিসেব দেখাতে পারে না,এই সাহেব ওই সাহেব জানে বলে আপনাকে
ঘোরাবে আরও কয়েক দিন।
-তার পর যে প্রোডাক্ট রয়ে গেল সেটা আনতে গেলেন,গিয়ে দেখবেন যে অবহেলায়
অযত্নে আপনার প্রোডাক্টের অবস্থা খারাপ,এমন ও হতে পারে সেই প্রোডাক্ট আর
সেল করতে পারবেন না কিং বা মার্কেটে এর চেয়ে কম দামে চলে এসেছে। জাস্ট
ই-কমার্স গুলো টাইম টু টাইম আপনাকে আপডেট না দিতে পারায় আপনি প্রোডাক্ট
গুলো সেল করতে পারেন নি,এমন ও হতে পারে আপনি জানেন ই না এই গুলো রয়ে গেছে
অথচ আপনার ই সেল ছিল।
-সবচেয়ে বড় ব্যাপার পেমেন্ট। পেমেন্ট আনতে গেলেন,গিয়ে শুনবেন ওদের এই
সমস্যা, কার্ডের পেমেন্ট পাইনি, কুরিয়ারের কাছে টাকা আটকে আছে,ওই সাহেব নেই
অফিসে,দেশের বাইরে আছে তাই সাইন করাতে পারেনি ,রাতে অনলাইনে ট্রান্সফার
করে দিবে ব্লা ব্লা । এভাবে আপনার ১৫ দিনে সেল হওয়া প্রোডাক্টের পেমেন্ট
পেতে পেতে লেগে যাবে ২ মাস। কি অবাক হচ্ছেন? ভুক্তভোগীদের একটু জিজ্ঞেস
করুন । যখন কোন কোন ইকমার্স সাইটের এই সমস্যা নিয়মিত বুঝতে হবে এদের পলিসি ই
এরকম ।
- অতঃপর তার দেখা পেলেন,আই মিন চেকের,তাও আবার বৃহস্পতি বারে,চেক পেয়ে
আর ব্যাঙ্ক এ যাওয়া হল না,রবি বারে জমা দিয়ে ক্যাশ পেতে পেতে আরও অনেক দিন।
এত দিন ঘুরতে ঘুরতে আপনার অবস্থা খারাপ ।
-এভাবে বেশ কিছু দিন বিজনেস করার পর দেখা গেল আপনি সব প্রোডাক্ট নিয়ে
আসবেন, সব গুলো ঠিক ভাবে পেলে আপনার মত লাকি মানুষ খুব কম ই থাকবে, কিছু
নষ্ট কিছু মিসিং,কই আছে খুঁজে পাচ্ছে না,কাল আসুন,পরশু আসুন বলে ঘুরবেন
কিছু দিন
-আপনি যে ধরনের প্রোডাক্ট দেন সেটা আপনাকে জিজ্ঞাসা করা ছাড়াই অন্যজন
থেকে নিবে,এবং একই রকম প্রোডাক্ট হলেও যে কোয়ালিটি তে পার্থক্য আছে তা তারা
বুঝবে না,মিক্স করে সেল করবে,কমপ্লেইন আসলে আপনার কে দোষ দিবে,বলবে আপনার
প্রোডাক্ট ই ভালো না।
-আপনি প্রোডাক্ট দিচ্ছেন,আপনার সাথে আপনার লোক ও গেল যে আপনি কোঁথ থেকে
প্রোডাক্ট আনেন সে চেনে,তাকে অফার দিবে আপনার অগোচরে সেই ই-কমার্স কে
প্রোডাক্ট দিতে,প্রথম টোপ আমরা অ্যাডভানস দিব আপনাকে, বাকি টা প্রোডাক্ট
আনার পর। পরে বলবে আপনি কিছু ইনভেস্ট করে তারপর আমাদের প্রোডাক্ট দেন, সে
যেই প্রোডাক্ট গুলো দিত,ঠিক সেগুলোই দেন।
-কিছু দিন পর ই-কমার্স সাইটের যদি সেল বেড়ে যায় তাহলে আপনাকে আর পাত্তাই
দেবে না,ইচ্ছে হল দেন নইলে না,আমাদের রুলস তো মানতে হবে ! কিছু ই-কমার্স
এর মধ্যে মার্চেন্ট এর টপ সেলিং হাই প্রফিট প্রোডাক্ট গুলো নিজেরাই আনাবে,
হাজার প্রোডাক্ট থেকে কষ্ট করে খুঁজে আনা আপনার প্রোডাক্ট হাতে দিয়ে
মার্কেট মার্কেটে লোক পাঠাবে,আর খুঁজলে যেখানে ঈশ্বর মেলে সেখানে
প্রোডাক্ট তো সামান্য ব্যাপার। আপনার গুলো স্টকে রেখে নিজেরাই সেল
করবে,পরে আপনাকে বলবে আপনার প্রোডাক্ট তো রয়ে গেছে সেল হয়না ফাউল
প্রোডাক্ট দিছেন :/ আর হা টাকা পেল কই? সেই টাকা হল আপনার সেল হয়ে যাওয়া
প্রোডাক্টের টাকা, হয়ত আপনাকে সেল হয়ে যাওয়ার ৫০% কিংবা ৮০% ই দিল,বাকি টা
এভাবেই কাজে লাগায়। কারণ মার্চেন্ট তো অনেক।
সতর্কতা
১) প্রথম ব্যাপার ই হচ্ছে যাকেই প্রোডাক্ট দেন,সে যাতে আপনার ব্রান্ডিং
করে সে দিকে খেয়াল রাখুন,যদিও এভাবে কাউকে পাবেন না,তাই নিজেই ই-কমার্স
গুলোকে দেয়ার সাথে সাথে নিজে সেল করুন। কারণ আপনার নিজের সেল ছাড়া আর সব
কিছুই কয়েকদিনের। নিজে সেলের দিকে নজর না দিলে দু দিন পর ভ্যানিশ হয়ে যাবেন
২) প্রোডাক্টের প্রাইজ এবং কমিশন আপনি ঠিক করুন। যেকোনো শর্ত মেনে নেয়ার
আগে ভালো ভাবে বুঝে নিন,বা এদের সাথে ডিল করে এমন কাউকে জিজ্ঞাসা করুন
৩) ইস্টোর বা এজাতীয় সুবিধা নেয়ার আগে কেউ নিচ্ছে তার কাছ থেকে জেনে নিন
কেমন হবে ব্যাপার টা, কি সুবিধা পাওয়া যায়,অসুবিধা কি কি জেনে কাজ শুরু
করুন।কারণ এখানে সেল ছাড়া আপনার ব্র্যান্ডিং ও হবে
৪) পেমেন্ট কত দিনে দিবে তার একটা লিখিত যদি নিতে পারেন নিন,যদিও কেউ দিবে না

৫) ডিল করার সময় কাউকে নিবেন না,নিজের সিক্রেটস নিজের মধ্যেই রাখুন,কারণ
বিজনেস সিক্রেটস কেউ জেনে গেল আপনার বিজনেসের ১২ টা বাজতে বেশী সময় লাগবে
না।
৬) নিয়মিত আপনার প্রোডাক্টের আপডেট নিন,কতটা প্রোডাক্ট রয়ে গেল তার খোজ
নিন,সেল রেশিও হিসেব করে প্রোডাক্ট দিন,বেশীও না আবার কম ও না এমন
৭) আপনার নিজের পেজ ওয়েব সাইট থেকে সেল করুন, নিজস্ব কিছু প্রোডাক্ট
আপনি কাউকেই দিবেন না, আপানর পরিচিতি বাড়ান,অন্য ই-কমার্সে বেশী ভালো ভালো
প্রোডাক্ট দিয়ে তাদের ব্র্যান্ডিং বাড়ানোর কোন মানে হয়না,নিজের ব্র্যান্ড
এর দিকে খেয়াল করুন। আপনি যদি খালি টাকার জন্য উদ্যোগ নেন,তাহলে আপনি আর
মুদি দোকানদারের মধ্যে পার্থক্য রইল না। আপনার ব্র্যান্ডের আপন পরিচিতি
ক্রিয়েট করুন,কয়েকদিন পর সেই ইকম গুলো কে যেন টাটা বাই বাই বলতে পারেন। এটা
দোষের কিছু না আবার যখন সময় হবে তখন নাহয় নিজের ব্র্যান্ডের নামে ইস্টোর
নিলেন

৮) তাদের সমস্যা আপনার জন্য সুযোগ, কারণ আগামীতে ওরাও আপনার কম্পিটিটর।
ভুল থেকে শিখুন এবং এগিয়ে যান। যা ভুল ছোট অবস্থাতেই করে ফেলা ভালো। সফল
মানুষদের ভুল অনেক, কিন্তু বিফল মানুষ জীবনে এক ভুল ই বার বার করে।
পরিশেষে সবচেয়ে বড় কথা আপনার ব্র্যান্ড ক্রিয়েট করুন। আজকে ২ টাকা লাভের
চেয়ে আগামীর লক্ষ টাকা যেন আপনার লক্ষ হয় । তাহলেও আপনি একজন সফল
উদ্যোক্তা হতে পারবেন। মানি ফ্লো এর জন্য দিতে পারেন কিন্তু তার সাথে সাথে
নিজের সেল-ও বাড়ান।
0 comments:
Post a Comment