গুগলের হোমপেজে গেলেই চোখে পড়বে গুগলের বিশেষ একটি ডুডল। মানুষের ইতিহাসের একটি যুগান্তকারী ঘটনা উদযাপন উপলক্ষে এই ডুডল তৈরি করেছে গুগল। পৃথিবী থেকে ৫১ কোটি কিলোমিটার দূরের ধূমকেতুতে পৌঁছার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে মানুষ।
সেখানে পৌঁছেছে মানুষের তৈরি মহাকাশচারী রোবট ‘ফিলে’। গতকাল বুধবার গ্রিনিচ মান সময় ১৬টা ৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৫ মিনিটে) ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) পাঠানো ‘ফিলে’ ‘কমেট ৬৭/পি/চুরিউমভ-গেরাসিমেনকো’ ধূমকেতুর পৃষ্ঠে অবতরণ করে। এই ধূমকেতুর অবস্থান পৃথিবী থেকে ৫১ কোটি কিলোমিটার দূরে, যা বরফ ও ধুলাবলিতে ঘেরা। এই ঐতিহাসিক ঘটনা উদযাপন করতে আজ গুগল তাদের হোমপেজে এই বিশেষ ডুডলটি প্রদর্শন করছে।
গুগলের ডুডলটিতে ফিলে রোবটযানটির একটি অ্যানিমেটেড সংস্করণ প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রায় এক দশক সময় ধরে মাহাকাশের পথ পাড়ি দিয়ে এই ধূমকেতু স্পর্শ করেছে ফিলে। বাংলাদেশ সময় গতকাল বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে ধূমকেতু সিক্সটিসেভেনপির কাছাকাছি অবস্থানরত ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) মহাকাশযান রোজেটা থেকে রোবটযান ফিলে বিচ্ছিন্ন হয়। এটি ধূমকেতুর পৃষ্ঠে অবতরণ করতে সাত ঘণ্টার মতো সময় নেয়। রোজেটার অভিযানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশের পাশাপাশি সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
গবেষকদের আশা, অভিযান সফল হলে ৪৫০ কোটি বছর আগে সৌরজগৎ সৃষ্টির সময়কার প্রকৃত রহস্য সম্পর্কে জানা যাবে।
রোবটযান কীভাবে ধূমকেতুতে অবতরণ করল, এ বিষয়ে গবেষকেরা বলেন, ধূমকেতু থেকে ১৪ মাইল (২৩ কিলোমিটার) দূরে থাকা অবস্থায় ১০০ কেজি ওজনের ফিলে রোবটযান মহাকাশযান রোজেটা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। কোনো ধরনের ইঞ্জিনের শক্তি বা দিকনির্দেশনা ছাড়াই এটি ধূমকেতুর দুর্বল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে এর ওপরে অবতরণ করে।রোবটযান ফিলের সফল অবতরণে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল চার কিলোমিটার দীর্ঘ ধূমকেতু সিক্সটিসেভেনপির অত্যন্ত কম মাধ্যাকর্ষণ। রোবটযানটি ধূমকেতুর ওপর পড়ে লাফিয়ে উঠে মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে পারত। তাই অবতরণ নির্বিঘ্ন করতে রোবটযানটি ধূমকেতু লক্ষ্য করে হারপুন (মাছ শিকারের চোখা দণ্ডবিশেষ) ছোড়ে। আর রোবটযানের পা থেকে বের হওয়া স্ক্রু ধূমকেতুতে আটকে গিয়ে এর অবস্থান সুসংহত করে।
এখন কী অবস্থায় আছে ফিলে?
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইএসএর গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা তিনবার ফিলেকে ধূমকেতুতে নামানোর চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন। এখন ফিলে স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। অবশ্য ধূমকেতুতে স্থির হলেও এখন এর পৃষ্ঠে খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। কারণ খোঁড়াখুঁড়ি করতে গেলে আবার ফিলে অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে বা লাফিয়ে উঠতে পারে। গবেষকেরা ধারণা করছেন, ফিলে তুলনামূলক নরম ধূলার ওপরে অবতরণ করতে পেরেছে। বর্তমানে এর যন্ত্র ও সেন্সর ঠিকমতো কাজ করছে এবং সেখান থেকে ভালো সংকেত পাচ্ছেন, যা বিশ্লেষণ করে কার্যকর তথ্য পাওয়ার বিষয়ে তাঁরা আশাবাদী।
0 comments:
Post a Comment