![]() |
ই-কমার্স থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার হচ্ছে |
সফটওয়্যার ও আইটি সার্ভিস খাতের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্র্ভিসেস (বেসিস)-এর অনুরোধে ই-কমার্স এর ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে সরকার। সোমবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে মাননীয় অর্থমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।
ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের এ ব্যবসায় এগিয়ে আসার এবং জনসাধারণকে অনলাইনে কেনাকাটায় উৎসাহিত করতে গত দুই বছর ধরে বেসিস মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে ও পরে বেসিস সভাপতি শামীম আহসানের নেতৃত্বে বেসিস নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ ই-কমার্সের ওপর থেকে মূসক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী
এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর চেয়ারম্যানের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছে। বেসিস এর অনুরোধে সাড়া দিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বেসিস এর পক্ষে অর্থমন্ত্রী বরাবর এ বিষয়ে জোর সুপারিশ করেন।উল্লেখ্য, ২০১৫-১৬ বছরের প্রাথমিক বাজেট ঘোষণায় ই-কমার্স লেনদেনের ওপর ৪% মূসক আরোপ করা হয়েছিল। এ
ব্যাপারে বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন করে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানায়। পরবর্তিতে ই-কমার্স সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের নিয়ে একটা গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্স।
ই-কমার্সের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করায় বেসিস সভাপতি শামীম আহসান অর্থমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বেসিস বরাবর তথ্য প্রযুক্তি খাতে তরুণ উদ্যোক্তাদের পক্ষে কাজ করে আসছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দেশের ই-কমার্স ব্যবসা সম্প্রসারণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এতে করে তরুণ উদ্যোক্তারা আরো অধিকহারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে এবং সাধারণ মানুষ অনলাইনে কেনাকাটায় উৎসাহিত হবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, যথাযথ পলিসি সাপোর্ট না পেলে টেলিকম এবং ফাস্ট মুভিং কনজুমার গুডসের মতো ই-কমার্স খাতও বিদেশীদের দখলে চলে যাবে বলেও মন্তব্য করেন বেসিস সভাপতি।
উল্লেখ্য, আমাদের দেশে অনলাইন কেনাবেচা বা ই-কমার্স একটি নতুন ব্যবসা। এখনো এই খাত একটি লাভজনক ইন্ডাস্ট্রি হিসাবে দাঁড়াতে পারে নি। এই খাতে বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই বয়সে তরুণ এবং ‘ফার্স্ট জেনারেশন’ উদ্যোক্তা যারা নিজস্ব তহবিল থেকে এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে। আমাদের দেশের ই-কমার্স সাইটগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ‘প্রতিযোগিতামূলক' দামে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করা। দেশে এখনো ই-কমার্সে জন্য পণ্য পরিবহন এবং অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম পুরোপুরি তৈরী হয়নি। এই প্রেক্ষিতে ৪% ভ্যাট আরোপ হলে সেটিও উদ্যোক্তাদেরই বহন করতে হতো এবং ফলশ্রুতিতে এই নতুন খাত বেড়ে উঠার আগেই মুখ থুবড়ে পড়তো দেশের ই-কমার্স সাইটগুলো যে সকল পণ্য বিক্রি করে তার প্রায় সব দেশেরই যেকোনো স্থানের মার্কেটে, অথবা ছোটো বা মাঝারি দোকানগুলোতে বিক্রি হয়। কিন্তু এই সকল দোকানে প্রযোজ্য ভ্যাট-এর প্রকৃত হার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নগণ্য । এছাড়াও ঢাকা বা চট্টগ্রামের মত বড় শহরের বাইরে পর্যাপ্ত ‘ভ্যাট’ আদায় পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (যেমন ECR সিস্টেম) না থাকার কারণে বেশির ভাগ দোকানেই সঠিকভাবে ‘ভ্যাট’ হিসাব বা প্রযোজ্য হয় না। এই প্রেক্ষিতে অনলাইন কেনাবেচায় ভ্যাট প্রয়োগ হলে ই-কমার্স সাইটগুলো কোনোভাবেই প্রতিযোগিতামূলক দামে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। উল্লেখ্য যে, অনলাইন ক্রেতাদের বড় অংশই ঢাকা ও চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন অঞ্চলের বাইরে সারা দেশে অবস্থিত।
ই-কমার্স সাইটগুলো তাদের নিজেদের সকল হিসাব 'ডিজিটাল' পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে ও প্রতিটি কেনাবেচা বা পেমেন্ট Track করা যায়। এই প্রেক্ষিতে যদি ই-কমার্স সাইট গুলো Physical দোকান বা ব্যবসার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারে এবং দেশে অনলাইন বাণিজ্য প্রসার লাভ না করে, তাহলে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য 'Informal' (নগদ লেনদেন ভিত্তিক/ cash-based) থেকে Formal পর্যায়ে উত্তরণের সম্ভাবনা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সর্বোপরি, সম্ভাবনাময় এই খাতে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান যে সুযোগ রয়েছে তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাবে না।
0 comments:
Post a Comment