সীমান্তে মোবাইল টাওয়ার সরানোর নির্দেশ |
কক্সবাজার-মিয়ানমার সীমান্তের বাংলাদেশের সব মোবাইল ফোন কোম্পানির নেটওয়ার্ক টাওয়ার সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ২৫ মে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, সীমান্তে স্থাপিত মোবাইল ফোনের টাওয়ারের নেটওয়ার্ক মিয়ানমারের মংডু পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত। মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সীমান্তে মানবপাচারসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। চিঠিতে যত দ্রুত সম্ভব সীমান্ত এলাকায় থাকা সব মোবাইল ফোনের টাওয়ার সরিয়ে নিতে বলা হয়।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ, উখিয়াসহ আশপাশ উপজেলার সীমান্ত-লাগোয়া বাংলাদেশের যেসব মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার রয়েছে, সেগুলোর নেটওয়ার্ক মিয়ানমারের ভেতরে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দেয় গোয়েন্দা সংস্থা। ওই রিপোর্টে বলা হয়, এই নেটওয়ার্কের কারণে বাংলাদেশি বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সিমকার্ড ব্যবহার হচ্ছে মিয়ানমারের ভেতরে। অধিকাংশ সিমের ব্যবহারকারী রোহিঙ্গারা। তারা ইয়াবা চোরাচালান, মানবপাচার, বিভিন্ন ধরনের পণ্য চোরাচালান এমনকি জঙ্গিবাদেও বাংলাদেশি সিমকার্ড ব্যবহার করছে। ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে তারা এই সিমকার্ড নিয়ে থাকে। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন জিহাদি গ্রুপের হাতে হাতে এখন বাংলাদেশি সিমকার্ড। যে কারণে কক্সবাজার মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত সব অপারেটরের মোবাইল ফোন টাওয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে সুপারিশ করে গোয়েন্দা সংস্থা। পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করে। এ ব্যাপারে পরে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, বেশির ভাগ টাওয়ার মিয়ানমার-লাগোয়া নাফ নদীর তীর ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে। এতে সহজেই মিয়ানমারের ভেতরে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়েছে। টেকনাফ থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, সীমান্তে মোবাইল ফোন টাওয়ার থাকার কারণে মানবপাচার, ইয়াবা বড়ি পাচারসহ সহজেই বিভিন্ন অপরাধ করছে রোহিঙ্গারা। এ ছাড়া তারা বিকাশের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করতে পারছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণকান্ডের ঘটনায় কয়েকজন রোহিঙ্গা জঙ্গিকে ধরতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। সন্দেহভাজন জঙ্গিরা যেসব মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তার অধিকাংশই রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিমের সংযোগ। বাংলাদেশ সীমান্তে অপরাধ করেই মিয়ানমারে ভেতরে চলে যায় তারা। বিজিবির ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানিয়েছেন, সীমান্ত-লাগোয়া মোবাইল ফোন টাওয়ারের বিষয়ে প্রতি মাসেই তাদের পক্ষ থেকে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল নেটওয়ার্ক মিয়ানমারের ভেতরে মংডু পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এ সব এলাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির সিমকার্ড অবৈধভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন দালাল ও অপরাধীচক্র মানবপাচারসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমে এ সব সিম কার্ড ব্যবহার করছে। ‘মানবপাচারসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে বাংলাদেশের সকল মোবাইল ফোন কোম্পানির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শুধু বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সীমিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি। মেজবাহ উদ্দিন আরও বলেন, এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে একটি মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে দেশীয় কোম্পানির মোবাইল নেটওয়ার্ক যাতে দেশের সীমানার বাইরে না পাওয়া যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিটিআরসির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুব-উল-আলমের স্বাক্ষরিত (তারিখ : ২৫ মে, ২০১৫) এক চিঠিতে এ সব অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে বাংলাদেশের সকল মোবাইল ফোন কোম্পানির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সীমিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
0 comments:
Post a Comment