728x90 AdSpace

Latest News
Tuesday, 26 May 2015

নকল সৃষ্টি করতে থ্রিডি প্রিন্টিং কাজ করছে

নকল



















থ্রিডি প্রিন্টিং ধীরে ধীরে এমন এক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যেখানে খালি চোখে আসল আর নকলের মধ্যে তফাত বোঝার ক্ষমতা নেই। জার্মান বিজ্ঞানীরা এক বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকলের মান আরও উন্নত করে তুলেছেন।

একটি আপেল- দেখলে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সেটি আসলে থ্রিডি কপি। নকল বলে চেনার কোনো উপায় নেই। এর পেছনে যে প্রিন্টিং প্রযুক্তি রয়েছে, তা অক্টোপাসের কাছ থেকে ধার নেয়া। অক্টোপাস গোত্রের কাটলফিশ ভোল বদলের কাজে ওস্তাদ। পরিবেশ অনুযায়ী সে নিজেকে এমনভাবে ক্যামোফ্লাজ করে ফেলে যে, শত্রুরা তাকে চিনতেই পারে না। নতুন ধরনের ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সে এক নিখুঁত আদর্শ।

ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট-এর ড.ফিলিপ উরবান নতুন এই সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সত্যি আমরা কাটলফিশ থেকে প্রেরণা পেয়েছি, কারণ সে কম রং নিয়েও নিখুঁতভাবে পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। তার ত্বকে ‘ক্রোম্যাটোফোর’ নামের ক্ষুদ্র রংয়ের ঝুলি রয়েছে। তা দিয়ে সে পানির নীচে সব রকম রং মেলে ধরতে পারে। এমনকি তার ত্বকের কাঠামো ও বিন্যাসও ফুটে ওঠে। একইভাবে আমাদের সফটওয়্যার থ্রিডি প্রিন্টিং করে।

গবেষকরা প্রিন্টিং-এর ক্ষেত্রে যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, ক্যামোফ্লাজ করতে কাটলফিশ-এরও সেই একই সমস্যার মুখে পড়তে হয়- অর্থাৎ ত্বকের মধ্যে সীমিত সংখ্যার রং দিয়ে পারিপার্শ্বিকের নিখুঁত নকল করা। ড. উরবান বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এই সিস্টেম মাত্র চারটি উপাদান ব্যবহার করতে ও একটি বস্তুর মধ্যে তার কম্বিনেশন করতে পারে৷ অথচ আমাদের আশেপাশের জগত রংয়ে ভরা। অর্থাৎ এই সব উপাদানকে এমনভাবে সাজাতে হয়েছে, যাতে ত্রুটিগুলি- মানুষের চোখে ধরা পড়ে না- এমন অংশে সরিয়ে দেওয়া হয়।”


ডার্মস্টাট শহরে ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের তৈরি ওয়েবসাইট-ভিত্তিক এই প্রিন্টার সফটওয়্যার আসলে এক ধরনের ‘ইউনিভার্সাল প্রিন্টার ড্রাইভার’, যা সব থ্রিডি প্রিন্টারে কাজে লাগানো যায়। প্রিন্টিং-এর পর বস্তুটি কেমন দেখাবে, ‘প্রিভিউ’-এর মাধ্যমে আগেই তা দেখে নেওয়া যায়। ফলে ভুলত্রুটি আগেই শুধরে নেওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে, প্রিন্টিং-এর উপাদান এখনো খুব দামি, এক কিলোর দাম প্রায় ৪০০ ইউরো।

ডার্মস্টাট শহরের বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণার জন্য সবচেয়ে নতুন প্রজন্মের থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার করছেন। প্রিন্টারের ‘নজল’ চার রকম বিশেষ কালি নিক্ষেপ করে। মূল বস্তুটির জন্য ম্যাজেন্টা, সায়ান, ব্লু ও হোয়াইট- মুদ্রনের জগতে যাকে সিএমওয়াইকে বলা হয়। এছাড়া ফাঁপা অংশকে মজবুত করতে বিশেষ উপাদান যোগ করা হয়৷ ড. উরবান বলেন, ‘‘তথাকথিত তরল ফটো-পলিমার-এর সাহায্যে প্রিন্ট করা হয়। এটা এক ধরনের কালি, যা ইংক-জেট প্রক্রিয়ায় স্প্রে করা হয়। সাধারণ ইংক-জেট প্রিন্টার যেমনটা করে থাকে। এরপর আল্ট্রা ভায়োলেট বা অতি বেগুনি রশ্মি দিয়ে কালিকে শক্ত করা হয়, একের পর এক স্তরে নকল বস্তুটি গড়ে তোলা হয়।”

নেফারটিটির আবক্ষ মূর্তি থেকে এই সফটওয়্যার কয়েক হাজার স্তরের ছবি তুলেছে। সেগুলির সাহায্যে একের পর এক স্তর ‘প্রিন্ট’ করা যায়৷ জটিল অ্যালগোরিদম-এর মাধ্যমে মূল বস্তুর অত্যন্ত বাস্তবসম্মত নকল গড়ে তোলা হয়- একেবারে উন্নততম হাই-রেজোলিউশন থ্রিডি প্রযুক্তিতে। এক বর্গ সেন্টিমিটারে প্রিন্টারটি ৯০ লাখ বিন্দু স্প্রে করে৷ গবেষকরা অবশ্য শুধু বস্তুর আকার ও তার সারফেস নকল করে সন্তুষ্ট নন। ড. উরবান বলেন, ‘‘শুধু আকার ও বিন্যাস ফুটিয়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য নয়। অন্যান্য ‘এফেক্ট’-ও নকল করতে চাই – যেমন বস্তুটির আলোকচ্ছটা, আলোর সামনে তার স্বচ্ছতার মাত্রা, প্রতিফলন ইত্যাদি৷ অর্থাৎ বস্তুটি ঘোরালে যাতে নানারকম রং সৃষ্টি হয়। আসলে আমরা আমাদের চারিপাশের জগত নকল করতে চাই।”

আলোর সামনে স্বচ্ছতার মাত্রার ক্ষেত্রে গবেষকরা যে সাফল্য অর্জন করেছেন, তার জন্য তাঁরা গর্ব অনুভব করেন। শুধু বাইরের দৃশ্যমান স্তরেই রং ব্যবহার করা হয়।

বস্তুর ত্রিমাত্রিক নকল প্রিন্ট করার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রিন্ট করা হয়৷ কখনো হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হওয়া থেকে শিল্পসামগ্রী রক্ষা করা হয়, কখনো বা নতুন কোনো পণ্যের বিকাশের প্রক্রিয়া এভাবে আরও দ্রুত করে তোলা হয়।
  • Blogger Comments
  • Facebook Comments

0 comments:

Post a Comment

Item Reviewed: নকল সৃষ্টি করতে থ্রিডি প্রিন্টিং কাজ করছে Rating: 5 Reviewed By: আবু নাইম