মাইক্রো এসডি কার্ড মোবাইল ডিভাইসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ডিভাইসের তথ্য ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে প্রযুক্তিটি ব্যবহার হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এখন স্মার্টফোন নির্মাতারা ব্যবস্থাটি থেকে সরে আসছে। স্মার্টফোনে মাইক্রো এসডি কার্ডের স্লট রাখার পক্ষপাতী নয় তারা। এ ব্যবস্থা ডিভাইসের অহেতুক দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। ফলে নিকট ভবিষ্যতে মাইক্রো এসডি কার্ড প্রযুক্তি ইতিহাস হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। খবর ইয়াহু নিউজ।
সম্প্রতি এমন অনেক ডিভাইস বাজারে আসছে, যেগুলোর অভ্যন্তরীণ তথ্য ধারণ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি হলেও মাইক্রো এসডি কার্ড যোগ করার কোনো স্লট রাখা হচ্ছে না। এ বিষয়ে স্মার্টফোন খাতের শীর্ষস্থানীয় চীনা প্রতিষ্ঠান শাওমির ভাইস প্রেসিডেন্ট হুগো বারা জানান, তারা ডিভাইসে মাইক্রো এসডি কার্ডের স্লট রাখার পক্ষপাতী নন। স্মার্টফোনে মাইক্রো এসডি কার্ডের স্লট রাখা একটি বাজে ধারণা।
তিনি বলেন, ‘আপনি অনেক সময় কিংসটন বা স্যানডিস্ক মাইক্রো এসডি কার্ড কিনছেন বলে মনে করেন। কিন্তু আসলে তা নয়। নকল মেমরি কার্ডগুলোর মান খুবই বাজে। এসডি কার্ডগুলো খুবই ধীর এবং অনেক সময় কাজ বন্ধ করে দেয়। এমনকি অ্যাপ ক্রাশ, তথ্য হারানোর মতো ঘটনাও ঘটে।’ মাইক্রো এসডি কার্ডের বিষয়ে গুগলের নকশা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাটিয়াস দুয়ার্তে বলেন, ‘বাস্তবে এগুলো গ্রাহকের মনে সংশয়ের সঞ্চার করে।’
মাইক্রো এসডি কার্ড থেকে সরে আসার জন্য স্মার্টফোন নির্মাতাদের কাছে বেশকিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অর্থ। মাইক্রো এসডি কার্ড স্লটের জন্য স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো বাড়তি পয়সা নিতে পারে না। কিন্তু ফ্লাশ স্টোরেজ বাড়ালে তার জন্য ডিভাইসের দাম ১০০ ডলার পর্যন্ত বেড়ে যায়।
মাইক্রো এসডি কার্ড স্লটের এ বিষয়গুলো হয়তো অ্যাপলই সবার আগে বুঝেছিল। কারণ তাদের আইফোনের কোনো সংস্করণেই মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহারের জন্য স্লট রাখা হয়নি। সম্প্রতি বাজারে আসা আইফোন সিক্সের ১২৮ গিগাবাইট ও ১৬ গিগাবাইট সংস্করণের দামে পার্থক্য প্রায় ২০০ ডলার। কিন্তু অ্যাপলের এ বাড়তি অভ্যন্তরীণ তথ্য ধারণ সক্ষমতা যোগ করতে ব্যয় পড়েছে ৫০ ডলার। অ্যাপলের পর অন্য স্মার্টফোন নির্মাতারাও মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট ব্যবস্থা থেকে সরে আসছে।
এখানে আরেকটি বিষয় রয়েছে, যা নির্মাতাদের মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবস্থা থেকে সরে আসতে উদ্বুদ্ধ করছে। মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহারের সুযোগ থাকলে গ্রাহক কম দামের ডিভাইসেই আগ্রহী হয়। কারণ এতে গ্রাহক মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করে কম দামের ডিভাইসে তথ্য ধারণ সক্ষমতা নিজের প্রয়োজন মতো বাড়িয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে অধিক অভ্যন্তরীণ তথ্য ধারণ সক্ষমতার ডিভাইস কিনতে গ্রাহকরা আগ্রহী হন না। এ কারণে স্মার্টফোন নির্মাতারা অধিক মুনাফার আশায় দামি স্মার্টফোনে মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট ব্যবহার থেকে সরে আসবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে কম দামের ডিভাইসে মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট ব্যবহার অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ এ ডিভাইসগুলোয় নির্মাতারা অধিক অভ্যন্তরীণ তথ্য ধারণ ক্ষমতা দিয়ে ব্যয় বাড়াতে চাইবে না। সেক্ষেত্রে মাইক্রো এসডি কার্ডের অপশনটি থাকছে।
এদিকে রিমোভেবল ব্যাটারির ব্যবহারও কমে আসছে। এখনকার অনেক ডিভাইসেই ফিক্সড ব্যাটারি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ কারণে নিকট ভবিষ্যতে গ্রাহকরা রিমোভেবল ব্যাটারি ও মাইক্রো এসডির স্লটের মতো পুরনো ব্যবস্থার অভাব অনুভব করবে বলেই মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
0 comments:
Post a Comment