জাতীয় সঙ্গীতকে মোবাইল ফোনের রিং টোন ও ওয়েলকাম টিউন হিসাবে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। এর বাণিজ্যিক ব্যবহার অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। দু’টি মোবাইল ফোন কোম্পানির আপিল নিষ্পত্তি করে দিয়ে গতকাল সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ। আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে রিং টোন ও ওয়েলকাম টিউন হিসাবে জাতীয় সঙ্গীতের ব্যবহার নিষিদ্ধই থাকল বলে জানান আইনজীবীরা।
মোবাইলের রিং টোন ও ওয়েলকাম টিউন হিসাবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’.. (জাতীয় সঙ্গীত) এর বাণিজ্যিক ব্যবহারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন কালিপদ মৃধা। ওই আবেদনে বলা হয়েছিলো, সংবিধানের ৪ অনুচ্ছেদে জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় প্রতীক সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ১৯৭৮ সালের জাতীয় সঙ্গীত বিধানে ২০টি ক্ষেত্রে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোনের রিং টোন হিসাবে জাতীয় সঙ্গীতের ব্যবহার সংবিধান ও আইনের পরিপন্থি। এছাড়া মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো জাতীয় সঙ্গীতের বাণিজ্যিক ব্যবহার করে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছে।
এ আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি গ্রহণ করে ২০১০ সালের ৫ আগস্ট বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রিং টোন ও ওয়েলকাম টিউন হিসেবে জাতীয় সঙ্গীতের ব্যবহারকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
এছাড়া মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণফোনকে লিভার ফাউন্ডেশনে এবং বাংলালিংককে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি রিসার্চ এবং রবি’কে (পূর্বে ছিলো একটেল) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ এ্যান্ড হসপিটালে ‘দাতব্য অনুদান’ হিসাবে ৫০ লাখ টাকা করে দেয়ার জন্যও বলা হয়। হাইকোর্টের রায় মেনে রবি অনুদান হিসাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে টাকা দিয়ে দেয়। কিন্তু ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে বাকি দুই কোম্পানি।
আপিলে রিটকারী পক্ষে ব্যারিস্টার মাসুদ আহমেদ সায়ীদ ও কোম্পানির পক্ষে অ্যাডভোকেট এম আসাদুজ্জামান শুনানি করেন। শুনানি শেষে আপিল নিষ্পত্তি করে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৩০ লাখ টাকা করে অনুদান দেয়ার জন্য দুই কোম্পানিকে নির্দেশ দেয়। আপিল বিভাগের রায় পাওয়ার এক মাসের মধ্যে এই টাকা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে দিতে হবে বলে জানান ব্যারিস্টার মাসুদ আহমেদ সায়ীদ।
0 comments:
Post a Comment